পাল্টা শুল্ক আরও কমানোর প্রস্তাবে যা বলল যুক্তরাষ্ট্র
-1151042.jpg?v=1.1)
মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে অন্তত ১৫ শতাংশে নামানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ দাবিটি গতকাল রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকেও উত্থাপন করা হয়।
তবে মার্কিন প্রতিনিধিদল জানায়, আপাতত শুল্কছাড় দেওয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি দৃশ্যমানভাবে কমতে না থাকলে এ বিষয়ে ছাড় দেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে না।
গত ৭ আগস্ট প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বাংলাদেশের চাওয়া এই হার যেন আরও কমানো হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগে সক্রিয় ভূমিকায় রয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মূলত পাল্টা শুল্ক অন্তত ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার বিষয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আবারও আলোচনার জন্য মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরের (ইউএসটিআর) কাছে সময় চেয়ে আবেদন জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডেন লিঞ্চের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের একটি দল ঢাকায় এসেছে।
গতকাল সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক করেছে প্রতিনিধিদলটি। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করতে যেসব বিষয়ে অগ্রগতি দরকার, সেগুলো কতটা এগিয়েছে তা চিহ্নিত করা হয়। একই সঙ্গে পাল্টা শুল্ক আরও কমানোর বিষয়টিও আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পায়। এ সময় মার্কিন প্রতিনিধিরা বাংলাদেশকে তাদের অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট বার্তা দেন। বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমানসহ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ওয়াশিংটনে তৈরি বাণিজ্য চুক্তির খসড়ার ভিত্তিতে এই বৈঠকে আলোচনা হয়। এতে নতুন করে কিছু বিষয়ে দর-কষাকষিও হয়। চূড়ান্ত আলোচনায় দুই পক্ষ একমত হলে খসড়ায় সংশোধন আনা হবে এবং সেটিই পরবর্তী সময়ে চূড়ান্ত চুক্তি হিসেবে গৃহীত হবে।
বৈঠক শেষে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক কমানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই মার্কিন বাজারে পণ্যের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক আরও কিছুটা হ্রাস পাক। এ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।’
বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও জানান, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, বৈঠকে তার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কৃষি ও জ্বালানি পণ্যের পাশাপাশি বিমান কেনার অঙ্গীকারের প্রসঙ্গও গুরুত্ব পেয়েছে এবং কেনাকাটার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে।
শেখ বশিরউদ্দীনের দাবি, ‘আমরা যদি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে আমাদের উদ্দেশ্য সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি, তবে পাল্টা শুল্ক হ্রাসের সম্ভাবনা জোরালো হবে।’ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্রুত রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মার্কিন প্রতিনিধিদলটি ঢাকা সফরকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়ামের সঙ্গেও বৈঠক করবে।