বাঁধনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা

ঢালিউড অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন প্রায়ই তার ভাবনা ও অনুভূতি ভক্ত-অনুরাগীদের সঙ্গে ভাগ করে নেন। এবার তিনি স্মরণ করলেন জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে ১ আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই সামাজিকমাধ্যম থেকে শুরু করে রাজপথে সরব ছিলেন আজমেরী হক বাঁধন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একমত পোষণ করে সরব ছিলেন অভিনেত্রী। সবসময় ছাত্র-জনতার পক্ষে কথা বলেন তিনি।
এবার সেই সময়ের অভিজ্ঞতা সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে জানিয়েছেন বাঁধন। বৃষ্টিতে ভিজে গত বছর ১ আগস্ট রাজধানীর ফার্মগেটে শিল্পীদের সমাবেশে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন এ অভিনেত্রী।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) একটি স্ট্যাটাসে বাঁধন লিখেছেন— রাত থেকেই মানসিকভাবে আমি অতিরিক্ত চাপে ছিলাম। তবে এক ধরনের উত্তেজনাও বোধ করছিলাম, যে কারণে হয়তো সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। ভোরে বিছানা থেকে উঠি। স্নিকার্স পায়ে দিই। কারণ আমি জানতাম না, আমার জীবনে আজ কি ঘটতে যাচ্ছে।
১ আগস্টের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে অভিনেত্রী লিখেছেন—আমার একমাত্র মেয়ে সেদিন মা-বাবার সঙ্গে ছিল। তারা তিনজনই জানত না আমি কোথায় যাচ্ছি। আমি তাদের এতটুকুই বলেছিলাম— কিছু মিডিয়ার বন্ধু মিলে একটা ইভেন্টে যাচ্ছি। তারপরেই শঙ্কা নিয়ে বাসা থেকে বের হই।
তিনি বলেন, এ আন্দোলন জোরালো করতে আগে থেকেই ব্যানার, পোস্টারসহ যাবতীয় প্রস্তুত ছিল। বাসা থেকে বের হয়েই আমি চলে যাই নিকেতনে। সেখান থেকে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, মাইক ঝুঁকি নিয়ে গাড়িতে নিয়ে নিই। তখন কারফিউ ছিল। এর মধ্যে আমরা জানতাম না সামনে কি হতে চলেছে। আমার ড্রাইভারকে বলেছিলাম— আপনার সঙ্গে মোবাইল আছে, যদি কিছু ঘটে ভিডিও করে রাখবেন। ড্রাইভার ভিতুর মতো আমার দিকে তাকিয়ে ছিল, আমিও ভীত ছিলাম সেই সময়।
বাঁধন বলেন, সেই সময় ক্রমেই তারকা, শিল্পী, কলাকুশলীসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ভিড় করতে থাকেন। সময় ছিল ১১টার মতো। এর মধ্যে বৃষ্টি দেখা দেয়। আমি খামারবাড়ি এলাকায় বাবার গাড়িটি রেখে ফুটপাতে অপেক্ষা করি। আরও কয়েকজনকে দেখি।
তিনি বলেন, পুলিশ এসে বলে আমরা কোনো সভা বা প্রতিবাদ করতে পারব না। কারণ পাশেই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন। তখনই রাজীব ভাই, মোমেন ভাই, মামুন ভাই এলেন। প্রোগ্রাম বাতিল করতে সিনিয়র পুলিশ তাদের কনভিন্স করার চেষ্টা করলেন। আমি চুপচাপ এসব দেখে সামনে পা বাড়ানো শুরু করি।
অভিনেত্রী সেই সময় পুলিশের সঙ্গে তর্কে জড়ান। কারণ পুলিশ তাদের নিরাপত্তার কারণে বারবার সরে যেতে বলেন। বাঁধন বলেন, পুলিশ কর্মকর্তারা আমাদের ভয়ও দেখান। কারণ আমরা সবকিছুকে অবজ্ঞা করে প্রতিবাদে সোচ্চার হতে যাচ্ছিলাম। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের সামনে প্রতিবাদের অনুমতি পাই।
প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার সেই অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, তারা চেষ্টা করেছিল মামুন ভাইকে গাড়িতে করে নিয়ে যেতে। কিন্তু লিমা আপা, রাজীব ভাই সবাই মিলে আমরা হেঁটে ফার্মগেট চলে আসি। পুলিশ আমাদের ওপর খুশি ছিল না। পরে বৃষ্টির মধ্যে ব্যানার নিয়ে আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাই।
অভিনেত্রী বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের ন্যায়বিচারের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করি। এটা ছিল আমার জীবনের সেরা পাওয়ারফুল মোমেন্টস। আমি কখনই দিনটির কথা ভুলব না।
তিনি বলেন, ১ আগস্টের দিন শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীদের নেতারা প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বক্তব্য দেন। অনেক সাধারণ মানুষও শিল্পীদের সঙ্গে এ সমাবেশে অংশ নেন। এখানে জমায়েত বেশ বড় হয়ে ওঠে। সেই সময় বক্তাদের মধ্যে ছিলেন মামুনুর রশীদ, আকরাম খান, পিপলু আর খান, ঋতু সাত্তার, আমরিন মুসা, আশফাক নিপুন, মোশাররফ করিম, সুকর্ণ শাহেদসহ অনেকে। বৃষ্টির কারণে সবাই বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করেন।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সেদিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে আরও উপস্থিত ছিলেন নির্মাতা নূরুল আলম আতিক, মাতিয়া বানু শুকু, রেদওয়ান রনি, তানিম নূর, নুহাশ হুমায়ূন, সৈয়দ আহমেদ শাওকী, আদনান আল রাজীব, শঙ্খ দাশ গুপ্ত, ইরেশ যাকের, সিয়াম আহমেদ, জাকিয়া বারী মম, সুকর্ণ শাহেদ, মোস্তফা মন্ওয়ার, দিপু ইমাম, সাবিলা নূর, প্রবর রিপন, শ্যামল মাওলা, রাফিয়াত রশিদ মিথিলাসহ আরও অনেকে।