ঢাকা উত্তর সিটিতে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি, খনন নীতিমালা না মানায় দুর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৭ AM

ওয়াসার ঠিকাদার সড়ক খননের নীতিমালা না মানার কারণেই মানুষের ভোগান্তি বেশি হচ্ছে বেশি দুর্ভোগ দক্ষিণখান, উত্তরখান, মোহাম্মদপুর ও মিরপুরে। পরিস্থিতি এমন যে কিছু সড়কে এখন হাঁটাও কঠিন হয়ে পড়েছে।

জুলাইয়ের শুরুর দিকে রাজধানীর মিরপুরের পশ্চিম কাজীপাড়া মসজিদ সড়কের সংস্কারকাজ শুরু করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এর পর থেকে তিন মাস এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর কারণ সড়কের কিছু জায়গা কাটা হয়েছে। আবার কিছু অংশে ফেলে রাখা হয়েছে নালা নির্মাণের জন্য আনা কংক্রিটের পাইপ। পরিস্থিতি এমন যে এখন হাঁটাও কঠিন হয়ে পড়েছে এ সড়কে।

এ সড়কের পাশের একটি খাবার হোটেলের মালিক ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে কথা হয় গত মঙ্গলবার। তিনি বলেন, আন্দোলন (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) শুরু হওয়ার পর সড়ক সংস্কারের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ঠিকাদারের লোকজন আর আসছেন না। তাঁদের খননযন্ত্রটিও (এক্সকাভেটর) পড়ে আছে। মানুষের চলাচলে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আবার বৃষ্টি হলে এ সড়কে জলাবদ্ধতা হয়। কোথাও কোথাও হাঁটুপানি জমে।

কাজীপাড়া মসজিদ সড়ক প্রায় ৮০০ মিটার দীর্ঘ। এ সড়ক দিয়ে কাজীপাড়া থেকে মিরপুর ৬০ ফুট এলাকায় যেতে হয়। প্রতিদিন হাজারো মানুষকে ভোগান্তি নিয়ে এ সড়ক পার হতে হয়।

ঢাকা উত্তর সিটির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, কাজীপাড়া মসজিদ সড়ক সংস্কারকাজের ঠিকাদার মাইশা কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোহাম্মদ পারভেজ। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে তাঁকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না।

তবে মোহাম্মদ পারভেজের সঙ্গে বুধবার হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করতে পেরেছে প্রথম আলো। তিনি বলেন, শিগগিরিই আবার কাজ শুরু হবে।

কাজীপাড়ার ওই সড়কই নয়, ঢাকা উত্তর সিটির আওতাধীন অনেক এলাকার সড়ক ও অলিগলি খোঁড়াখুঁড়ি-কাটাকাটি কিংবা খানাখন্দের কারণে এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কোথাও সড়ক সংস্কারের কাজ করছে খোদ সিটি করপোরেশন। কোথাও আবার ঢাকা ওয়াসার পানির সরবরাহের সংযোগ স্থাপন ও অন্যান্য সেবা সংস্থার উন্নয়নকাজের জন্য সড়ক কেটে রাখা হয়েছে। আবার রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অনেক এলাকার সড়কের পিচ উঠে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি এলাকায় সড়ক রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৩৪০ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রধান সড়ক ১৯০ কিলোমিটার, সংযোগ সড়ক (সেকেন্ডারি রোড) প্রায় ৩৪৫ কিলোমিটার ও অলিগলির সড়ক প্রায় ৮০৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের হিসাবে ১৫০ কিলোমিটারের বেশি সড়কের সংস্কার বা মেরামত এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৭১ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৩৫৫ কোটি টাকা। সড়ক সংস্কারের সঙ্গে ৬১ কিলোমিটার নালা ও ১৫ কিলোমিটার ফুটপাত নতুন করে নির্মাণ করা হবে। আর চলতি অর্থবছরে সড়ক সংস্কার (নালা ও ফুটপাত নির্মাণসহ) কাজে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) ফারুক হাসান মো. আল মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, যেসব সড়কে ছোটখাটো গর্ত হয়েছে, সেগুলো মেরামত করা হচ্ছে। যেসব সড়ক বিভিন্ন সংস্থা কাটছে, তাদের কাজ শেষ হওয়ার পর তা মেরামত করা হবে।


মোহাম্মদপুর এলাকার বেশির ভাগ সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু হয় এ বছরের শুরুতে। সেখানকার বিভিন্ন সড়কের নিচ দিয়ে নালা নির্মাণের জন্য পাইপ বসাচ্ছে সিটি করপোরেশন। আবার কিছু সড়কে ঢাকা ওয়াসা পানির পাইপ বসাচ্ছে। আবার কিছু সড়ক কাটা হয়েছে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনের লাইন বসাতে। ফলে পুরো মোহাম্মদপুর এলাকার বেশির ভাগ সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে মানুষ।

সূত্র: পিএ