ঘূর্ণিঝড় রিমাল

বিদ্যুৎহীন পৌনে ৩ কোটি মানুষ, বন্ধ ২৫ হাজার মোবাইল টাওয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ মে ২০২৪, ১০:০৩ AM

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে লণ্ডভণ্ড উপকূলের জেলাগুলো। এ ঝড়ের ক্ষতিকর প্রভাব এরই মধ্যে হিসাব করা শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে উপকূলের জেলাগুলোর বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় পৌনে ৩ কোটি গ্রাহক এখনো অন্ধকারে রয়েছেন। দিকে বিদ্যুৎ না থাকায় সারা দেশে প্রায় ২৫ হাজার মোবাইল ফোন টাওয়ার বন্ধ রয়েছে। এর ফলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকার। কিছু কিছু জায়গায় সোমবার (২৭ মে) রাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পুরো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে লেগে যেতে পারে দুই দিন। 

বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘এখনো উপকূল অঞ্চলে ঝোড়ো বাতাস বইছে। রাস্তাঘাট অনেক এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ঝড়ে গাছ পড়ে আছে লাইনের ওপর। এ রকম অবস্থায় মঙ্গলবারের আগে ক্ষতিগ্রস্ত বিতরণ লাইন মেরামত করা যাবে না। তবে উপকূল অঞ্চলের বাইরের জেলাগুলোতে ঝড়ের কারণে গাছ পালা উপড়ে গিয়ে লাইন বিচ্ছিন্ন হয়েছে, এ রকম কোনো কোনো এলাকায় রাতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) কর্মীরা লাইন মেরামতে কাজ করছে, সেখানে রাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহের চেষ্টা চলছে। তবে পুরো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে দুই দিন সময় লাগতে পারে।’ 

এক বিজ্ঞপ্তিতে বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, সারা দেশে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ২ কোটি ৬৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৫০ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন রয়েছেন। সবচেয়ে বেশি নোয়াখালীতে বিদ্যুৎহীন রয়েছেন সাড়ে ৭ লাখ গ্রাহক। জামালপুরে ৭ লাখ ৪০ হাজার গ্রাহক, কিশোরগঞ্জে ৬ লাখ ৮৫ হাজার গ্রাহক, পটুয়াখালীতে ৬ লাখ ৭০ হাজার গ্রাহক, ময়মনসিংহ ১-এ ৬ লাখ ১৩ হাজার গ্রাহক, কুমিল্লা ১-এ ৬ লাখ ৭ হাজার গ্রাহক, টাঙ্গাইলে ৬ লাখ গ্রাহক অন্ধকারে রয়েছেন। এছাড়া আরও বিভিন্ন জেলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লাখ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন রয়েছেন। 

এছাড়া বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রাপ্ত খবরে, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকোর) এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিদ্যুৎহীন রয়েছেন ৪ লাখ ৫৩ হাজার গ্রাহক। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকার ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে পোল বিনষ্ট হয়েছে ২ হাজার ৭১৮টি, ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে ২ হাজার ৩৬৩টি, স্প্যান (তার ছেঁড়া) ৭১ হাজার ৮৬২টি, ইন্সুলেটর ভাঙা ২২ হাজার ৮৮৬টি, মিটার নষ্ট হয়েছে ৫৩ হাজার ৪৬৫টি। এসবের আর্থিক ক্ষতির পরিমান ৯১ কোটি ২০ লাখ টাকা। 

এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকোর) প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি হলো—পোল বিনষ্ট ২০টি, পোল হেলে পড়া ১৩৫টি, বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে যাওয়া ২৪.৩৪ কিলোমিটার, ১১ কেভি পোল ফিটিংস বিনষ্ট হওয়া ১৪২ সেট, ট্রান্সফরমার বিনষ্ট ১২ টি,১১ কেভি ইন্সুলেটর বিনষ্ট ১৩৪। এসবের আর্থিক ক্ষতির পরিমান ৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। 

এদিকে রবিবার মধ্যরাত থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার কোথাও নেই বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ কখন স্বাভাবিক হবে তা বলতে পারছে না বিদ্যুৎ অফিস। বিদ্যুৎ না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে মোবাইল নেটওয়ার্কও। লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কে রাস্তার ওপর গাছ উপড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গাছ সরিয়ে সোমবার দুপুর নাগাদ যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়। 

বাগেরহাটে রোববার বিকেল থেকে প্রায় ৫ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শরীয়তপুরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় প্রায় ৩ লাখ ৬৫ হাজার গ্রাহক বিচ্ছিন্ন রয়েছে। 

স্থানীয়রা বলছেন, রবিবার রাত ১১টার দিকে বিদ্যুৎ চলে যায়। এরপর থেকে আর বিদ্যুতের দেখা মেলেনি।

শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার আলতাপ হোসেন বলেন, ঝড় পুরোপুরি থামলেই আমাদের লাইনম্যানরা এলাকায় যাবেন। কোথায় ত্রুটি হয়ে তা শনাক্তের পরই লাইনগুলো চালু করে দেওয়া হবে। এরপর থেকে বিদ্যুৎ স্বাভাবিক হবে। 

ক্ষয়ক্ষতি কেমন হয়েছে জানতে চাইলে আলতাপ হোসেন বলেন, এখনও বলা যাচ্ছে না। পুরো লাইন পরীক্ষা করে পরে বলা যাবে।

এদিকে, রোববার দুপুর থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন সাতক্ষীরা। ঝালকাঠিতে কয়েকটি সড়কে গাছ পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে গাছ সরিয়ে নিলে স্বাভাবিক হয় যান চলাচল। পটুয়াখালী ও পিরোজপুরে বিদ্যুৎ না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকার জনগণ। 

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সারা দেশে প্রায় ২৫ হাজার মোবাইল টাওয়ার অচল হয়ে গেছে। যার ফলে মোবাইল যোগাযোগ বড় ধরনের বিভ্রাট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, যে টাওয়ারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো মেরামতে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। অপারেটরদের মাধ্যমে যতদ্রুত সম্ভব টাওয়ারগুলো চালু করা হবে। 

এছাড়া বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, মাদারীপুরসহ উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকা এখন পর্যন্ত  বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ।