কেএনএফের নারী শাখার প্রধান সমন্বয়ক আকিম বম গ্রেপ্তার

রমজানে ব্যাংক ডাকাতি ও অপহরণের ঘটনায় ফের আলোচনায় আসে বান্দরবানের পাহাড়ি কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। এর পর থেকে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী ও র্যাব। এবার অভিযান চালিয়ে কেএনএফের বান্দরবান সদর ও রোয়াংছড়ি জোনের নারী শাখার প্রধান সমন্বয়ক আকিম বমসহ দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১৫। আকিম দেশ ও বিদেশ থেকে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ নেওয়া একজন যোদ্ধা। এর আগে এক অভিযানে কুকি চিনের ১৮ নারী সদস্যকে গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী।
গতকাল শুক্রবার (১৭ মে) ভোর ছয়টার দিকে বান্দরবানের লাইমী পাড়া থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার অপর জনের নাম লাল সিয়াম লম বম (৬০) বলে জানা গেছে।
এদিন সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান র্যাব-১৫ অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন।
গ্রেপ্তার আকিম বম সম্পর্কে তিনি বলেন, ২০২৩ সালে তিনি কাল্পা কেউক্রাডং এলাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে ভর্তি হন। এ সময় মাইকেল নামে একটি ছেলের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং পরবর্তীতে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মাইকেলের মাধ্যমেই কেএনএফের ট্রেনিংয়ে যান তিনি।
র্যাব অধিনায়ক জানান, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শুরু দিকে এক সন্ধ্যায় আকিম ও মাইকেল পায়ে হেঁটে কেএনএফের ট্রেনিং সেন্টারের দিকে রওনা হন। পরের দিন ভোর পাঁচটার দিকে তারা রোয়াংছড়ির গহীন পাহাড়ি জঙ্গলের ট্রেনিং সেন্টারে পৌঁছান। সেখানে পৌঁছানোর পর ভান থার ময়-বম নামে কেএনএফের একজন নারী কমান্ডারের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয় এবং ট্রেনিং সেন্টারে তাদের স্বাগত জানানো হয়।
আকিমের দেওয়া তথ্যমতে, সেখানে আরও অনেক নারী ছিলেন। তবে তাদের বেশিরভাগের মুখে কালি মাখা থাকতো। যার কারণে অনেককেই চেনেন না আকিম। মুখের এ কালি প্রতি সাতদিন পর পর বদল করতেন তারা। ট্রেনিং সেন্টারের নাম ছিল কেডিওন (ঈশ্বরের দিকে)।
প্রশিক্ষণের বিষয়ে আকিম জানায়, ভোর তিনটার দিকে ঘুম থেকে উঠে ট্রেনিং শুরু করতে হতো তাদের। প্রশিক্ষণ হিসেবে শারীরিক প্রশিক্ষণ বিশেষ করে মার্শাল আর্ট শেখানো হতো। প্রশিক্ষণের কষ্ট সহ্য করার জন্য তাদের বেত দিয়ে আঘাত করা হতো নিয়মিত। এছাড়া বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য লাঠি দিয়েও আঘাত ও টর্চার করা হতো প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে।
পাহাড় ও জঙ্গলে কীভাবে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে হয় এ ব্যাপারে তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। এছাড়াও জঙ্গলে বৈরি পরিবেশে কীভাবে টিকে থাকতে হয় সে প্রশিক্ষণও পেয়েছেন তারা। প্রশিক্ষণ চলতো সকাল ১০টা পর্যন্ত। এসময় সাধারণ খাবারের পাশাপাশি তারা বনের পাখি, কাঠবিড়ালি শিকার করেও রান্না করে খেতেন। তার প্রশিক্ষণের সময় মেয়েদের একদলে ৫০ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। প্রায় তিন শতাধিক পুরুষ সদস্যও প্রশিক্ষণে ছিলেন তাদের সঙ্গে। রুমা এলাকায় আরও দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ প্রশিক্ষণরত ছিলেন বলেও জানান তিনি।