জব্বারের বলীখেলায় বাঘা শরীফের বাজিমাত
বৈশাখের এই সময়ে তাপদাহ। প্রখর রোদের আঁচে গা পুড়ে যাওয়ার দশা। ঘামে ভিজে যাচ্ছে কাপড়। তবু ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে খেলা উপভোগ করছেন শত শত মানুষ। ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলা দেখতে তারা উপস্থিত হয়েছেন। চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানের মাঝখানে তৈরি মঞ্চে তাদের চোখ। বিকেল ৪টা বাজতেই একে একে মঞ্চে ওঠেন বলীরা। শুরু হয় দৃষ্টিনন্দন ‘বলীখেলা’। মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে চলে তুমুল লড়াই। কে কাকে নিচে ফেলে বিজয়ী হতে পারেন! গতকাল বৃহস্পতিবার এ লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করেন কুমিল্লার বাঘা শরীফ। এবারের আসরের জয়ের মুকুট ওঠে তাঁর মাথায়।
খেলার শুরু থেকেই দর্শকের ছিল উপচে পড়া ভিড়। প্রথম রাউন্ড শেষে শুরু হয় চ্যালেঞ্জ রাউন্ড। এরপরই সেমিফাইনাল। সবার মনে তখন একটাই প্রশ্ন– কোন দু’জন যাচ্ছেন চূড়ান্ত লাড়াইয়ে? অবশেষে ফাইনাল নিশ্চিত করেন কুমিল্লার দুই বলী– মোহাম্মদ রাশেদ ও বাঘা শরীফ। শুরু হয় মুকুট নির্ধারণী লড়াই, যা চলে ১১ মিনিট ধরে। শ্বাসরুদ্ধকর এ লড়াইয়ের এক পর্যায়ে রাশেদ নিজে থেকেই পরাজয় শিকার করে নেন। তিনি শরীফের হাত তুলে ধরে বিজয়ী ঘোষণা করেন। পরে রেফারি আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে বিজয়ীর স্বীকৃতি দেন।
কুমিল্লার হোমনা থানার মহিপুর গ্রামের মোহাম্মদ শরীফ স্থানীয়দের কাছে ‘বাঘা শরীফ’ নামেই বেশি পরিচিত। বলীখেলায় এবারই প্রথম তিনি অংশ নিয়েই বাজিমাত করলেন। চ্যাম্পিয়ন হয়েই সবাইকে ‘ভি’ সূচক চিহ্ন দেখান তিনি। নানা অঙ্গভঙ্গিতে ছবির জন্য পোজ দেন। বাঘা শরীফ বলেন, ঐতিহ্যের বলীখেলায় প্রথমবার অংশ নিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়ে অন্যরকম ভালো লাগছে।
এটি আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। অনেক দিনের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রশিক্ষণের ফল পেলাম। আগামীতেও শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ধরে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাব।
এবারের ১১৫তম আসরে অংশ নিতে শতাধিক বলী আসেন। তাদের মধ্যে ৮৪ জনকে নিবন্ধনভুক্ত করে আয়োজক কমিটি। গতকাল তারা খেলায় অংশ নেন।
দ্বিতীয় হওয়া মোহাম্মদ রাশেদের বাড়িও একই এলাকায়। এবারের বলীখেলায় গতবারের মতো তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন খাগড়াছড়ির বলী সৃজন চাকমা। তাঁর বাড়ি জেলার খবংপড়িয়া গ্রামে।
শিষ্যদের সুযোগ দিতে সরে গিয়ে এবারের আসরে অংশ নেননি কুমিল্লার শাহজালাল বলী। সবার ধারণা ছিল, চারবারের চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল এবারও মুকুট ধরে রাখবেন। এবারের বিজয়ী শরীফ ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করা রাসেল কুস্তির প্রশিক্ষণ নিয়েছেন শাহজালালের কাছ থেকেই।
ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে বিকেলে বলীখেলার চলতি আসরের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। প্রধান অতিথি ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য চট্টগ্রাম-৬ রাউজানের সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী।
খেলার পাশাপাশি ছিল বৈশাখী মেলার আয়োজন। তীব্র গরমের মধ্যে মেলায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিক্রেতারা পসরা সাজিয়ে বসেন। ছিল বিপুল সংখ্যক ক্রেতার উপস্থিতিও।