মহিলা জামায়াত কর্মীদের পেটানোর নির্দেশ, ভিডিও ভাইরাল
-1141044.jpg?v=1.1)
১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগের শাসনে নির্যাতনের শিকার বিএনপি এখন নিজেই সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও লুটপাটসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
সর্বশেষ নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় নজরুল ইসলাম স্বপন নামে বিএনপির এক সাবেক নেতার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ৫৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে তাকে মহিলা জামায়াত কর্মীদের ‘পেটানোর নির্দেশ’ দিতে শোনা যায় বলে অভিযোগ। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর এলাকায় ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১১ অক্টোবর কবিরহাট উপজেলার সুন্দলপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড বিএনপির উদ্যোগে এক মহিলা সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা চৌধুরী লিটন। আর বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সুন্দলপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন। এ সময় তিনি মহিলা জামায়াত কর্মীদের প্রতিহতের কথা বলেন।
৫৪ সেকেন্ডের বক্তব্যে নজরুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘এখানে শতকরা ৯৫ পার্সেন্ট মানুষ বিএনপি করে এবং বিএনপি পরিবার। এখানে কোনো জামায়াত-শিবিরের কোনো মহিলা, শুরা সদস্য ঢুকতে দেওয়া হবে না। আপনারও এলার্ট থাকবেন। বিশেষ করে মা-বোনদের মাঝে কোনো রকমের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা যাবে না। আপনাদেরকে শুরা সদস্য বলে, আল্লাহর আইন বলে, আপনাদের বেহেশতের সার্টিফিকেট দেবে নাকি দাঁড়ি পাল্লায় ভোট দিলে। নাউজুবিল্লাহ চিন্তা করেন কত বিশাল মাপের একটা কথা। মানুষ হজ করে, মক্কা শরিফ যায়, দরকার আছে? তাদেরকে ভোট দিয়ে আমি বেহেশতে চলে যাইতেছি। একদম পিডাইবেন যদি এই রকম মহিলা ঢুকে।’
এদিকে মহিলা জামায়াত কর্মীদের নিয়ে এমন বক্তব্য দেওয়ায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সুন্দলপুর ইউনিয়ন জামায়াতের আমির হাফেজ নুরুল্লাহ এবং সেক্রেটারি মাওলানা সাইফুল ইসলাম। তারা বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ব্যানারে এক উঠোন বৈঠকে উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এবং জেলা আহ্বায়ক কমিটির বর্তমান সদস্য কামরুল হুদা চৌধুরী লিটনের উপস্থিতিতে সুন্দলপুর ইউনিয়ন বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহিলা কর্মীদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ, উস্কানিমূলক, উদ্দেশ্যমূলক ও মানহানিকর বক্তব্য প্রদান এবং জামায়াত শিবিরের মহিলা কর্মীদেরকে ইউনিয়নে ঢুকতে না দেওয়া ও ধরে পেটানোর হুমকি প্রদান করেন। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচারের অধিকার সব নাগরিকের রয়েছে। কিন্তু নিজ দলের ব্যর্থতা ও অপরাধ ঢাকতে অন্য দলের সদস্যদের ব্যাপারে মিথ্যা বক্তব্য এবং হুমকি প্রদান বিগত ফ্যাসিবাদের চরিত্রই বহন করে।
তারা আরও বলেন, প্রত্যেক রাজনৈতিক দল তাদের আদর্শ প্রচার করবে এবং আদর্শিক সমালোচনাও করবে। এটাই সবার গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে নিজ দলের ব্যর্থতা এবং অপরাধ ঢাকতে অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে উস্কানিমূলক, মিথ্যা, মানহানিকর, বিভ্রান্তিমূলক ও উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্য প্রদান এবং আক্রমণ করার হুমকি দেওয়া কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য হতে পারে না। যা অতীতে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শক্তি করেছিল। এইভাবে যদি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলতে থাকে তাহলে পরবর্তীতে সৃষ্ট পরিস্থিতির জন্য সব দায়-দায়িত্ব বক্তব্য প্রদানকারী বক্তা এবং তার দলকেই নিতে হবে। আমরা সংশ্লিষ্ট দলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করাসহ এমন উস্কানিমূলক ও মানহানিকর বক্তব্য প্রদানকারী এবং হুমকিদাতার বিষয়ে সঠিক তদন্ত ও সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি এবং ভবিষ্যতে এই জাতীয় বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
সুন্দলপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন বলেন, আমাদের সবাইকে সংযত হতে হবে। আমি রাজনৈতিক মাঠে একটা বক্তব্য দিয়েছি সেটা আমার ভুল হয়েছে। এটা আমার বলা উচিত হয়নি। তবে আমাকে বর্তমানে যেভাবে গালিগালাজ করা হচ্ছে আমি তার তীব্র নিন্দা জানাই। আপনারা কেবল আমার বক্তব্য শুনেছেন। কিন্তু তারা যে আমাকে খারাপ ভাষায় কথা বলছে তা দেখছেন না?
নজরুল ইসলাম স্বপনকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এবং জেলা আহ্বায়ক কমিটির বর্তমান সদস্য কামরুল হুদা চৌধুরী লিটন। তিনি বলেন, উঠান বৈঠকে যখন বক্তব্য দিয়েছি তখন আমি তার পাশেই ছিলাম। কিন্তু তার বক্তব্য আমার স্মরণে ছিল না। বাসায় আসার পর ফেসবুকে বক্তব্যটা ছড়িয়ে পড়লে আমি দেখতে পাই। সেখানে সে যে ভাষায় কথা বলেছে এটা তার উচিত হয়নি। আমি তাকে সতর্ক করেছি এবং বলেছি আগামীতে যেন এমন বক্তব্য না দেয়।