গণসাক্ষরতা অভিযানের
প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করাসহ বৈষম্য দূরীকরণে তিন প্রস্তাব
প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করাসহ শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণে তিনদফা প্রস্তাব দিয়েছে গণসাক্ষরতা অভিযান। রোববার (১৭ নভেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এ প্রস্তাব তুলে ধরেছে সংস্থাটি। এতে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য অর্থায়ন বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
শিক্ষা নিয়ে কর্মরত সহস্রাধিক বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, শিক্ষাবিদ, গবেষক ও শিক্ষাকর্মীদের প্রাতিষ্ঠানিক ঐক্যজোট গণসাক্ষরতা অভিযানের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্যে করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ একটি ক্রান্তিকাল পার করছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রত্যাশার সঙ্গে একমত হয়ে সমাজে ক্রমবর্ধমান বহুবিধ বৈষম্য দূর করার জন্য জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ।
এ ক্রান্তিকালে শিক্ষায় বিরাজমান বৈষম্য দূর করে সমাজের সার্বিক বৈষম্য দূরীকরণের সুফল টেকসই করতে হবে। এ লক্ষ্যে সবার জন্য, বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় অর্থায়ন বৃদ্ধি করার কোনো বিকল্প নেই।
সংস্থাটি বলছে, মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তরের বেসরকারি স্কুলে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ‘শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা’ প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে ভর্তি ফি নির্দিষ্ট করে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২৩ এর তথ্যমতে, সারাদেশে ২১ হাজার ৮৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৬৯১টি সরকারি।
নীতিমালা অনুযায়ী ঢাকা মহানগর এলাকার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকার বেশি আদায় করা যাবে না। আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলা মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা এবং ইংরেজি মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা নেওয়া যাবে। উন্নয়ন খাতে কোন প্রতিষ্ঠান ৩ হাজার টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না।
উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্তদের জন্য এ খরচ বহনে সমস্যা না হলেও নগর দরিদ্র, বস্তিবাসী, শ্রমজীবী, প্রতিবন্ধী, ভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও গৃহশ্রমিকদের পরিবারের জন্য এ ব্যয় বহন করা কষ্টসাধ্য। বিশেষ করে মেয়ে শিশুরা এতে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তদুপরি কঠোর বাস্তবতা হলো যে, ঢাকা মহানগরী ও এর আশেপাশের এলাকায় অবস্থিত প্রায় ৫ হাজার বস্তিতে ১০ লক্ষাধিক নিম্নবিত্ত, বিত্তহীন মানুষ বসবাস করেন। এছাড়াও যাদের ঘরে দুই বা ততোধিক সন্তান তাঁদের জন্য তো এটি ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’।
সংস্থাটির আশংকা, এতে সমাজে আরো বৈষম্য বাড়বে এবং ‘সবার জন্য শিক্ষা’র লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে সংস্থাটি শিক্ষায় বিরাজমান বৈষম্য ধাপে ধাপে দূরীকরণের লক্ষ্যে আশু করণীয় হিসাবে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছে। সেগুলো হলো:
১. মূলধারার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশেষ করে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিতে চাপে থাকা জনগোষ্ঠির কথা বিবেচনায় রেখে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক করা প্রয়োজন। তাহলে কিছুটা হলেও বৈষম্যের লাগাম টানা সম্ভব হবে।
২. এজন্য রাষ্ট্রের যে ব্যয় বৃদ্ধি হবে, তার পরিমাণ আনুমানিক ৭ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা। এটির সংস্থান করা বর্তমান সরকারের জন্য কঠিন হবে না বলে আমাদের বিশ্বাস। এর মাধ্যমে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ’র স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ সুগম হবে।
৩. জরুরি ভিত্তিতে নগর দরিদ্রসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতে ও বৈষম্য দূরীকরণে সম্প্রতি ঘোষিত ভর্তি নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করে ফি হ্রাস করা আবশ্যক।