তোফাজ্জল হত্যায় ঢাবি থেকে বহিষ্কার হচ্ছেন ৮ শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৯ AM

চোর সন্দেহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ছয় শিক্ষার্থী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেন এই ছয় শিক্ষার্থীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে রাত ৯টার দিকে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়া ছয় শিক্ষার্থী হলেন, মো. জালাল মিয়া, সুমন মিয়া, মো. মোত্তাকিন সাকিন, আল হুসাইন সাজ্জাদ, আহসানউল্লাহ ও ওয়াজিবুল আলম। এরা সবাই ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র।

এদিকে তোফাজ্জেল হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে আট শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে হল প্রশাসন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ইতোমধ্যে তোফাজ্জল হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে ৮ শিক্ষার্থীর হলের সিট বাতিল করে হল প্রভোষ্ট চিঠি দিয়েছেন। এ ছাড়া তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে বহিষ্কারের বিষয়টি জানানো হবে। 

ওই আট শিক্ষার্থী হলেন- পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মো. মোত্তাকিন সাকিন শাহ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের জালাল মিয়া ও আবদুস সামাদ, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের সুমন মিয়া, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের আল হোসাইন সাজ্জাদ, গণিত বিভাগের আহসান উল্লাহ, সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ওয়াজিবুল আলম, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ফিরোজ কবির ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আবদুস সামাদ।

আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত বাকি শিক্ষার্থীদেরও খুঁজে বের করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

এরই মধ্যে তোফাজ্জল হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার ছয় ঢাবি শিক্ষার্থী গতকাল শুক্রবার আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। 

তারা হলেন, মো. জালাল মিয়া, সুমন মিয়া, মো. মোত্তাকিন সাকিন, আল হুসাইন সাজ্জাদ, আহসানউল্লাহ ও ওয়াজিবুল আলম। এরা সবাই ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র।

শুক্রবার বরগুনার পাথরঘাটায় গ্রামের বাড়িতে বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে নিহত তোফাজ্জলকে। তাকে দাফনের পর এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।

এছাড়া তোফাজ্জল হত্যার বিচার চেয়ে গতকাল দুপুরে ঢাবির অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানবন্ধন কর্মসূচি পালন করেন ঢাকার পাথরঘাটা উপজেলার শিক্ষার্থীরা।

বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা করেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ছয় শিক্ষার্থী। 

শিক্ষার্থীরা বলেন, ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে ছাত্রদের ছয়টি মোবাইল ও মানিব্যাগ চুরি হয়েছিল। তোফাজ্জল সেদিন রাত আটটার দিকে হলের ফটক দিয়ে মাঠের ভেতরে যান।

তখন কয়েকজন শিক্ষার্থী চোর সন্দেহে তাকে আটক করে হলের অতিথিকক্ষে নিয়ে যান। পরে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাকে স্টাম্প দিয়ে মারধর করা হয়। এরপর তাকে হলের ক্যানটিনে নিয়ে রাতের খাবার খাওয়ানো হয়। খাওয়া শেষে আবার তাকে হলের অতিথিকক্ষে এনে ব্যাপক মারধর করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।

আসামিরা বলেন, সেদিন অতিথিকক্ষে মারধরের পর রাত ১২টার দিকে হলের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষক তোফাজ্জলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তারা জানতে পারেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় তোফাজ্জল মারা গেছেন।