ডাকসুতে ছাত্রদল প্যানেলের শপথ

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:৪১ PM

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচারণার শেষ দিনে পূর্বঘোষিত ইশতেহারের ভিত্তিতে শপথ পাঠ করেছে ছাত্রদল মনোনীত আবিদ-হামিম-মায়েদ প্যানেল।

রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সংসদ ও সব হল সংসদের প্রার্থীরা এ শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

শুরুতে প্যানেলের কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক পদপ্রার্থী চেমন ফারিয়া ইসলাম মেঘলা জাতীয় সঙ্গীত পাঠের মাধ্যমে শপথ পাঠের উদ্বোধন করেন।

শপথ পাঠে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের প্রার্থীরা বুকে হাত রেখে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রতিজ্ঞা করেন। তারা বলেন, “প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য একটি আনন্দময়, বসবাসযোগ্য এবং নিরাপদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলের ঘৃণিত গণরুম প্রথা, গেস্টরুম নির্যাতন, জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগদানের জন্য বাধ্য করানো এবং ভিন্নমতের জন্য অত্যাচার ও নিপীড়ন চালানোর যে রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। যেকোন মূল্যে আমাদের ক্যাম্পাসে তা আর কখনো ফিরে আসতে দেবো না।”

“যেভাবে আমরা বিগত দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী শাসনামলের চূড়ান্ত লড়াইয়ে ২০২৪ এর জুলাইয়ের রক্ত ঝরা দিনগুলোতে বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম, যেভাবে আমাদের অগ্রজরা ১৯৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যেভাবে তারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যেভাবে আমাদের পূর্বসূরিরা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও সাতচল্লিশের দেশভাগের আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন, ঠিক একইভাবে ভবিষ্যতে যদি দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব কিংবা জনগণের মুক্তির পথ আবারও কোনো কালো শক্তির দ্বারা অবরুদ্ধ হয়, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ শক্তি ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সেই অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।”

“আমাদের বোনদের তথা নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে একটি নিরাপদ, নিয়মতান্ত্রিক এবং সুরক্ষিত এলাকায় পরিণত করবো, যেখানে তাদের জন্য নিরাপদ আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি, সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সর্বোপরি তাদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা হবে।”

“বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর জন্য হলগুলোতে প্রশাসনের মাধ্যমে বৈধ সিটের ব্যবস্থা, সাশ্রয়ী মূল্যে স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সহজ-সুবিধাজনক পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো।”

“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আমরা সাইবার বুলিং, মিসইনফরমেশন, ডিজইনফরমেশন ও ফেক নিউজসহ অনলাইনভিত্তিক সব ধরনের অপতৎপরতা রুখে দিতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো।”

“আমাদের প্রাণের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আধুনিক ও মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে আমরা শিক্ষা, গবেষণা ও পড়াশোনার পরিবেশের মানোন্নয়ন, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সম্প্রসারণ এবং শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনমূলক কার্যক্রমসমূহ গতিশীল করতে নিজেদের সর্বোচ্চ নিয়োজিত রাখবো।”

“দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার ডাকসুর প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হলে, আমরা ডাকসুর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবেশে শিষ্টাচার, সৌজন্য ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখবো এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক ও আচরণে সর্বদা সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিক মনোভাবের প্রতিফলন ঘটাবো।”

শপথ গ্রহণের শেষে প্যানেলের প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দেন—

“আমাদের প্যানেলের প্রতিটি প্রার্থী এই শপথের প্রতিটি শব্দ অক্ষরে অক্ষরে ধারণ করি। নির্বাচিত হলে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রতিটি অঙ্গীকার বাস্তবায়িত করবো, ইনশাআল্লাহ।”