উত্তপ্ত গণপূর্ত

প্রধান প্রকৌশলীর পাশে নেই সুবিধাভোগী ৯ প্রকৌশলী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৮ মে ২০২৪, ১০:২২ AM

ডিপ্লোমা প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানের বদলীকে কেন্দ্র করে হঠাৎ উত্তপ্ত গণপূর্ত অধিদপ্তর। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডিপ্লোমাদের হাতে প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার অনেকটাই নাজেহাল হয়েছেন। দীর্ঘ সময় তাকে নিজ দপ্তরে আটকে রাখার ঘটনাকে নজিরবিহীন বলছেন প্রকৌশলীরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বেশি যেটা আলোচনায় এসেছে তা হলো- প্রধান প্রকৌশলীকে ব্যবহার করে সুবিধা নেওয়া গ্রুপের নিষ্ক্রিয়তা।

শামীম আখতারের পাশে ছিলেন না সুবিধাভোগীরা :
প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারের সঙ্গে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের চলমান বিরোধে তার নিজের তৈরি বলয়ের অনেকেই পাশে ছিলেন না। এরমধ্যে তার সবচেয়ে আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শহিদুল আলমের নামও সামনে এসেছে। ২০০৫ সালের শুরু থেকে ২০০৭ সালের জুলাই পর্যন্ত জোট সরকারের সময় গণভবন ও প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্ব পালন করা শহিদুল দীর্ঘ ১২/১৩ বছর পরে গণপূর্তে ফিরে সবচেয়ে বেশি সুবিধা নেন। এছাড়া অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নাসিম খান, খায়রুল ইসলামের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। এছাড়া শামিম আখতারের আর্শিবাদপুষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান সবুজ, আতিকুল ইসলাম, সাইফুজ্জামান চুন্নু, আজমল হক মুন, মাসুদ রানা, আব্দুস সাত্তার, আবুল কালাম আজাদ, এস এম সানাউল্লাহ এই আট প্রকৌশলীও সংকটে প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারের পাশে ছিলেন না। এর কারণ হিসেবে অভিজ্ঞরা মনে করেন, প্রকৌশলী শহিদুল আলম বিএনপিপন্থী ও সাইফুজ্জামান চুন্নুর বাবা স্থানীয় বিএনপির সভাপতি। তবুও তারা শামীম আখতারের হাত ধরে সবচেয়ে বেশি সুবিধা নেন। কিন্তু প্রধান প্রকৌশলী অসুস্থ হওয়ার কারণে সাইফুজ্জামান ও তাঁর আস্থাভাজন মিরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ হাসান ও আজিমপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান নতুন করে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সামসুদ্দোহাকে প্রধান প্রকৌশলী বানাতে উঠে পড়ে লেগেছে। আর এখানে ব্রীজ হিসেবে সাবেক প্রধান প্রকৌশলী টিপু মুন্সি কাজ করছে বলে জানা যায়। আবার এক বছরে তিনবার বদলী অর্ডার করানো সুযোগ সন্ধানী মোস্তাফিজুর রহমান ও সব প্রধান প্রকৌশলীর সময় ক্রীম পোস্টিং এ থাকা আতিকুর রহমানও হঠাৎ নিশ্চুপ আছেন। মোস্তাফিজুর রহমান হঠাৎ নিজেকে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচয় দিয়ে কিছুটা ভিন্ন পথে হাঁটা শুরু করেছেন। 

এদিকে একাধিক প্রকৌশলী মনে করেন, ডিপ্লোমা সমিতির সভাপতি রায়হান মিয়া প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদের দপ্তর (ডিভিশন-৩) কর্মরত। সেখানে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আজাদের নিষ্ক্রিয়তা নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। এছাড়া ডিভিশন-৩ এ আজাদের পোষ্টিংয়ে ভূমিকা রেখেছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন রতন। আজাদ যখন পূর্ত মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা উইংয়ে কর্মরত ছিল তখন আজিমপুরের একটি বিদ্যুৎ সাবস্টেশন কাজে নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও প্রায় ৫ কোটি টাকা বেশি টেন্ডারমূল্য দিয়ে কাজটি পেতে সহয়তা করেছেন। ডিপ্লোমাদের এ আনন্দোলনে কাউন্সিলর রতনের উস্কানির বিষয়টিও প্রকৌশলী আজাদকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। 

কলকাঠিকাঠি নাড়ছে যারা : 
শামীম আখতার অসুস্থ হওয়ার খবরে নতুন করে প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার একটা অদৃশ্য দৌড় শুরু হয়েছে। এ দৌড়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সামসুদ্দোহা, মোসলেহ উদ্দিন, আশরাফুল আলম ও মইনুল ইসলাম যুক্ত হয়েছেন। এরমধ্যে সামসুদ্দোহা ও মোসলেহ উদ্দিন এগিয়ে রয়েছেন। তবে যদি কোন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি তৈরি হয়, এমন অবস্থায় প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ার নিতে কাজ করে যাচ্ছেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শহিদুল আলম। এছাড়া সম্প্রতি বদলি হওয়ায় ক্ষুব্ধ শমিরণ মিস্ত্রীর ভাই এসডিই মিঠুন মিস্ত্রীও এ ঘটনায় সক্রিয় হয়ে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের ইন্ধন দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

রায়হান, মিজান, আমিনুল, মনিরুজ্জামানরা আইনের উর্ধ্বে : 
গত মার্চে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানকে অনিয়মের অভিযোগ এনে বদলি করেন প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার। এরপর তিনি নিজ কর্মস্থলে না গিয়ে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ বার দেনদরবার করেছে প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে।  মিজানুর রহমান আজিমপুরে ৫ বছর, আমিনুল ইসলাম ঢাকায় ১০ বছর এবং রায়হান মিয়া ঢাকায় ১০ বছর ধরে কর্মরত। দীর্ঘ সময় ঢাকায় থাকা এসব প্রকৌশলীরা কাজ না করে বিল উত্তোলনই তাদের নেশায় পরিণত হয়েছে। ক্যাডার প্রকৌশলীদের নিয়ম মাফিক বদলি থাকলেও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বদলিতে আনন্দোলনের ভয় দেখানো হয়। আর এ কারণে সমিতিতে সক্রিয় একেক ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ঢাকায় ৫ থেকে ১০ বছর বহাল তবিয়তে রয়েছে।

প্রশাসনিক দূর্বলতা : 
গণপূর্তের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রধান প্রকৌশলীকে নাজেহাল করার ঘটনায় এখনো পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন ভূমিকা রাখেনি মন্ত্রণালয়। এখন পর্যন্ত হয়নি কোন তদন্ত কমিটিও। তবে পূর্তমন্ত্রী উভয় পক্ষকে বলেছেন, তিনি আজ শনিবার ভোরে বিদেশ যাচ্ছেন। তাই আপাতত উভয় পক্ষ যেন চুপচাপ থাকেন।

প্রকৌশলীদের একটি অংশ মনে করেন, শামীম আখতার প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার পর বিসিএস পাবলিক ওয়ার্ক এসোসিয়েশন অকার্যকর করে ফেলেন। ফলে এ সংকটময় মুহুর্তে ক্যাডার প্রকৌশলীর সংগঠনের পক্ষ থেকেও কোন ভূমিকা নেওয়া হয়নি। যদি সংগঠন সক্রিয় থাকতো তাহলে এ ঘটনা মোকাবেলা করতে পারতো অথবা এ ধরনের ঘটনা নাও ঘটতে পারতো।